ফ্লসিং করা কি খুব গুরুত্বপূর্ণ?

ডেন্টিষ্ট্রিতে “ফ্লস” একটি ইন্টারডেন্টাল/অন্তদন্তীয় (দুই দাঁতের মধ্যবর্তী স্থান) ক্লিনার বা পরিস্কারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সাধারণত যে সকল স্থানে ব্রাশ পৌঁছতে পারে না এমনকি মাউথওয়াশও জীবাণু ধ্বংসে তেমন ভূমিকা রাখতে পারে না সে সকল স্থানে ফ্লস খুবই কার্যকরী ।

ফ্লসিং করা শব্দটা অনেকের কাছেই নতুন লাগতে পারে। তাই সহজ করে বলা যাক। রেজিস্টার্ড ডেন্টাল সার্জন (BDS) চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্য মতে, ফ্লসিং হচ্ছে সেই পদ্ধতি যার মাধ্যমে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্যকণা বের করা হয়। অনেকেই কাজটি করেন টুথপিক বা খিলালের মাধ্যমে। অনেকে ব্যবহার করেন পিন জাতীয় ধাতব কিছু। বাস্তবে দুটোই ক্ষতিকর। ভালো হলো সুতা দিয়ে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্যকণা বের করা। তবে সাধারণ সুতা থেকে ভালো হলো ফ্লসের জন্য বিশেষভাবে তৈরি সুতা ব্যবহার।

আপনার মুখের স্বাস্থ্যের সাথে আপনার সমগ্র শরীরের স্বাস্থ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত, অসুস্থ ও অস্বাস্থ্যকর মুখ নিশ্চিতভাবে আপনার জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ, সেই মুখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে “ফ্লসিং” উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারেঃ–

ফ্লসিং দাঁত এবং দাঁত-মাড়ির সংযোগস্থলে পাথর স্বরূপ পদার্থ জমতে বাধা দেয়ঃ
ফ্লসিং আপনার দাঁতের গোড়ার প্লাক/ময়লা পরিস্কার করতে সবথেকে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে, স্টিকি/আঠালো খাবার যা ব্রাশ বা কুলকুচি করেও দূর করা যায় না, তা শুধু এবং শুধু মাত্র ফ্লস ব্যবহারে দূর করা সম্ভব।

ফ্লসিং শরীরের অন্যান্য রোগ থেকে আপনাকে সুরক্ষিত করবেঃ
যদি আপনার দাঁতের গোড়ায় পাথর জমে, তবে আপনি মাড়ি প্রদাহ / জিনজিভাইটিস নামক রোগে ভুগবেন, আপনার মুখ থেকে রক্ত পড়বে, খুবই দুর্গন্ধ আসবে। এমতাবস্থায় ব্যাকটেরিয়া জীবাণু সহজেই আপনাকে আক্রমণ করবে এবং এই সকল ব্যাকটেরিয়া জীবাণু আপনার হৃৎপিন্ড, ফুসফুস সহ সারা শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে সক্ষম। আপনি ফ্লস ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই দাঁতের গোড়ায় পাথর জমা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন, সাথে মুক্তি পাবেন শরীরের অন্যান্য রোগ–শোক থেকেও।

ফ্লসিং খরচ কমায়ঃ
ফ্লসিং করতে এই কারনে বেশী অনুপ্রাণিত করা হয় কারন এটা কম খরচে সবথেকে সেরা ডেন্টাল ক্লিনার হিসেবে কাজ করে, প্রফেশনাল ডেন্টাল কেয়ার খুবই ব্যয়সাপেক্ষ এবং জটিল পদ্ধতি কিন্তু একমাত্র ফ্লসিং যা অত্যন্ত কম খরচের একটি পদ্ধতি যা অতীব ফলপ্রসূ এবং এটি আপনার মুখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে অনেক বেশী সাহায্য করবে।

ফ্লসিং আপনার মাড়ির সুরক্ষাও প্রদান করেঃ
ফ্লস দাঁত এবং মাড়ির সংযোগস্থলের প্লাক/ময়লা দূর করে, ব্যাকটেরিয়া জীবাণুকে বাসা বাধতে দেয় না। যদি ব্যাকটেরিয়া জীবাণু বাসা বাধে তবে ধীরে ধীরে আপনি মাড়ি রোগে ভুগতে শুরু করবেন যার প্রাথমিক নাম মাড়ি প্রদাহ বা জিনজিভাইটিস। জিনজিভাইটিস/মাড়ি প্রদাহের দরূণ মুখের সংক্রমনে অনেকেই ভুগে থাকেন, মাড়িতে সংক্রমণ হয়ে ফুলে উঠে, ব্যথা হয় এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, এ অবস্থায় যদি আপনি চিকিৎসা না নেন তবে এটা অত্যন্ত ভয়ানক মাড়ির রোগের রূপ নিতে পারে।

এটা মাড়ির সংক্রামণ ঘটিয়ে হাড় ক্ষয় করতে পারে আর নিশ্চিতভাবে আপনাকে দাঁত হারাতে হবে, ফ্লস ব্যবহারে এই রকম জটিল সমস্যা থেকেও সহজেই রেহাই পাওয়া যায়।

ফ্লসিং এবং ব্রাশিং শুধু মাত্র ব্রাশ করার থেকে অধিক কার্যকরীঃ
টুথব্রাশ অনেক সময় দুই দাঁতের মধ্যবর্তী স্থান বা ইন্টার স্পেসে জমে থাকা খাদ্যকণা পরিষ্কার করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে ডেন্টাল ফ্লস অন্তত দিনে একবার ব্যবহার করলে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাদ্যকণা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

নিয়মিত ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয়, মাড়িরোগ এবং মুখের দুর্গন্ধ থেকে পরিত্রাণ লাভ করা অনেকাংশ সম্ভব। নিয়মিত সঠিক পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশ করার পাশাপাশি আসুন আজ থেকেই আমরা ফ্লসিং এর অভ্যাস গড়ে তুলি। তবেই আপনিও হতে পারেন রোগহীন সুন্দর, সুস্থ দাঁত ও সজীব নি:শ্বাসের অধিকারী।

ফ্লসিং করার নিয়ম

১। প্রায় ১৮ ইঞ্চি ফ্লস নিয়ে আপনার দুই হাতের মধ্যমাতে পেঁচিয়ে নিন

২। ফ্লস এক হাতের কড়ে আঙুল ও অন্য হাতের দুই আঙ্গুলে চিমটি দিয়ে ধরুন

৩। এরপর তা দুই দাঁতের ফাঁকে ঢুকিয়ে ‘c’ আকারে ধরুন

৪। এরপর তা সাবধানে ওপরে–নিচে করুন। দাঁতের দিকে ঘষুন

৫ আপনার পেছনের দাঁতসহ সব দাঁতের ফাঁকে ফ্লস করতে ভুলবেন না। প্রয়োজনে চিত্র দেখে বুজে নিন

Leave a Reply