ডেন্টাল ইমপ্লান্ট কী ?

ডেন্টাল ইমপ্লান্ট হলো টাইটানিয়াম বা টাইটানিয়াম সংকর ধাতুর ছোট স্ক্রু, যা হারানো দাঁত প্রতিস্থাপনে ব্যবহূত হয়। টাইটানিয়াম হলো একমাত্র ধাতু, যা আমাদের দেহ কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই গ্রহণ করে এবং হাড়কে এর চারপাশে বাড়তে দেয়। শরীরে টাইটানিয়াম আরও অনেক চিকিৎসায় ব্যবহার হয়, যেমন-এর প্লেট ও স্ক্রু ভাঙা হাড় জোড়া দিতে বা শরীরের কৃত্রিম জোড়া সন্ধি বানাতে ইত্যাদি।

কীভাবে কাজ করে আমাদের দাঁতের দুটো অংশ। একটি রুট বা শেকড়, যা হাড়ের ভেতর থাকে আর অন্যটা ক্রাউন বা মুকুট, যা আমরা দেখতে পাই। দাঁতের শেকড় দাঁতকে হাড়ের সঙ্গে ধরে রাখে এবং শক্ত ও মজবুত রাখে। আর মুকুট অর্থাৎ যাকে আমরা দাঁত বলি তা দিয়ে আমরা খাদ্য চর্বণ ও পেষণ করি। ডেন্টাল ইমপ্লান্টেরও দুটো অংশ। একটা টাইটানিয়াম স্ক্রু, যা হাড়ের মধ্যে বসানো হয় এবং অন্যটা এর ক্রাউন বা দাঁত, যা টাইটানিয়াম স্ক্রুর ওপর বসানো হয়। এই টাইটানিয়াম স্ক্রু হাড়ের মধ্যে বসানো হলে তা হাড়ের সঙ্গে জোড়া লেগে যায় এবং দাঁতের শেকড়ের মতো কাজ করে; যার ওপর পরে কৃত্রিম দাঁত বসানো হয়। দেখা যাচ্ছে, টাইটানিয়াম ইমপ্লান্ট সব দিক থেকেই আমাদের স্বাভাবিক দাঁতের মতো আর এটা কাজও করে স্বাভাবিক দাঁতের মতোই।

কারা নেবেন এই চিকিৎসা?

যাদের মুখের হারানো দাঁত আছে, তাদের জন্যই ডেন্টাল ইমপ্লান্ট। যদিও হারানো দাঁতকে অনেকভাবে প্রতিস্থাপন করা যায়, যেমন-ডেন্টাল ব্রিজ বা ডেনচারের মাধ্যমে। কিন্তু ব্রিজ করতে যেমন ভালো কিছু দাঁত কাটতে হয়, ডেন্টাল ইমপ্লান্ট বসাতে সে রকম কিছুই করতে হয় না। যাদের দাঁত নেই যাদের মুখে কোনো দাঁত নেই, তারা সাধারণত বাঁধানো দাঁতের পাটি বা কমপ্লিট ডেনচার ব্যবহার করে; যা আকারে বেশ বড় হওয়ায় অনেক সময় মুখে ধরে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে, ভালোমতো খাওয়া-দাওয়া তো দূরের কথা। এসব রোগীর জন্য ডেন্টাল ইমপ্লান্ট আশীর্বাদস্বরূপ।

ডেন্টাল ইমপ্লান্টের ওপর বসানো পুরো দাঁতের পাটি শুধু সুদৃঢ় আর মজবুতই নয়, আকারেও অনেক ছোট হওয়ায় রোগীর জন্য আরামদায়কও বটে। যারা আগে প্রচলিত ডেনচার দিয়ে শুধু নরম ধরনের খাবারই খেতে পারত, তারা ইমপ্লান্টের ওপর বসানো ডেনচার দিয়ে আবার স্বাভাবিক খাবার ।

যাঁরা মুখ ও দাঁতের যত্ন সঠিকভাবে নেন না, তাঁদের তো বটেই, এমনকি যাঁরা নেন, তাঁদেরও দাঁত পড়ে যায়। বিশেষ করে ক্যারিজ হয়ে বহু সময়ই দাঁত এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে, আর তা রক্ষা করা সম্ভব হয় না। মাঢ়ির অসুখের (জিনজিভাইটিস ও পেরিওডন্টাইটিস) কারণেও দাঁত হারানোর ঘটনা ঘটে।প্রয়োজন হলে সুস্থ প্রতিটি মানুষের মুখেই ইমপ্লান্ট বসানো যায়। মাঢ়ির সুস্থতা এবং চোয়ালের হাড়ের সঠিক পুরুত্ব থাকলে ইমপ্লান্ট সফল হয় বেশি।

যাঁরা মুখ ও দাঁত ঠিকমতো পরিষ্কার রাখেন না, যাঁদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস (ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে ইমপ্লান্ট করতে বাধা নেই) ও হার্টের অসুখ আছে, কিংবা যাঁরা ক্যান্সারের জন্য রেডিওথেরাপি (মুখ, ঘাড় ও চোয়ালের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে) নিচ্ছেন, যাঁরা চেইন স্মোকার, তাঁদের ইমপ্লান্ট না করাই ভালো।

একসময় এসব ক্ষেত্রে নকল দাঁত (ডেনচার) বসানো ছাড়া বিকল্প ছিল না। পরে ডেন্টাল ক্রাউন (ক্যাপ) ও ব্রিজ তৈরি করা সম্ভব হয়। ক্যাপ ব্রিজ স্থায়ীভাবে প্রতিস্থাপন করা হয় বলে খোলার বিড়ম্বনা থাকে না। তবে তাতেও এমন কিছু অসুবিধা আছে, যা রোগীদের মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। যেমন, ব্রিজ স্থায়ীভাবে বসাতে হলে পাশে থাকা ভালো দাঁতকে সাপোর্ট হিসেবে নিতে হয়, যা বহু ক্ষেত্রেই অসুবিধা সৃষ্টি করে। ডেন্টাল ইমপ্লান্ট আবিষ্কৃত হওয়ার পর সেই অসুবিধাটা দূর হয়েছে। পাশের দাঁত বা দাঁতগুলোকে সাপোর্ট (অ্যাবাটমেন্ট) হিসেবে ব্যবহার না করে হাড়ের ভেতর কৃত্রিম শিকড় (টাইটানিয়াম) বসিয়ে দিব্যি আসল দাঁতের মতো দাঁত তৈরি করা যায়, ব্যবহারও করা যায় তেমনভাবেই। উন্নত দেশগুলোতে এই ইমপ্লান্ট শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে।

গত কয়েক বছরে ইমপ্লান্ট পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আমাদের দেশে আগে ইমপ্লান্ট হতো না। কিন্তু এখন হচ্ছে; এবং উন্নত বিশ্বের মতো একই পদ্ধতিতে। ইমপ্লান্ট বিষয়ে দেশের বেশ কয়েকজন ডেন্টিস্ট বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণও নিয়েছেন।

Leave a Reply